নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর (বিজিপি) সঙ্গে সেদেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠী দখল করে নেওয়া ১২টি চৌকি পূন:রুদ্ধারের প্রচন্ড গোলাগুলি শব্দে এপারের সীমান্তবাসীরা রাতভর আতঙ্ক বিরাজ করছে।
রবিবার (২৩ অক্টোবর) ভোরবেলা সীমান্তের ওপার থেকে আবারও দফায় দফায় গুলাগুলি শব্দ এপারের সীমান্তবাসীদের মনে আতঙ্কিত করছে।
সূত্র জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৪৩ পিলার থেকে ৫০ পিলার জুড়ে গভীর রাতে দফায় দফায় ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ এপারে ভেসে আসায় এপারের বাসিন্দাদের মনে আতঙ্কে বিরাজ করছে।
সীমান্তের ওপারে সেদেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠী দখল করে নেওয়া প্রায় ১২টি চৌকি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠা মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে এপারে গত শনিবার দুপুর থেকে নিক্ষেপ করে আসছে ভারি অস্ত্র, গুলি আর মর্টারের গোলা। এরপর গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে গুলাগুলি ও মর্টারশেলের আওয়াজ শুনতে পায় সীমান্তে বসবাসরত লোকজন।
সেসব ভারি অস্ত্রের আওয়াজে কম্পিত হচ্ছে এপারের ভূখণ্ড। এতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এ সময় সীমান্তে বসবাসরত প্রায় ৪০০ পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদে চলে আসতে সক্ষম হয়েছে। এখন পর্যন্ত হতহতের খবর পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নূরুল আবছার ইমন ও দৌছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইমরান।
এদিকে, চেয়ারম্যান নূরুল আবছার ইমন বলেন, গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যান্তরে তাদের বিদ্রোহী গ্রুপের সঙ্গে দেশটির সরকারের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর (বিজিপি) মধ্যকার চৌকি দখল নিয়ে প্রচণ্ড গোলাগুলি শব্দ শুনতে পায়। এ সময় পরক্ষণে বেশ কয়েটা গুলি আমাদের ভূখন্ডে এসে পড়লে তখন সীমান্তে বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সড়ে আসতে নির্দেশ দিয়। গভীর রাতেও থেমে থেমে গোলাগুলি শব্দ শুনা গেছে রবিবার সকাল ১১টার দিকেও কয়েকটি গুলি আমাদের ভূখণ্ডে ফের এসেছে বলেও জানান তিনি।
তবে দেশটির গোলাগুলিতে এদেশে ছুড়ে আসা গুলিতে কোন হতাহত হয়নি।
দৌছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইমরান জানান, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের একটি স্বশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি শুরু হলে বেশ কয়েকটি গুলি আমাদের ভূখন্ডে এসে পড়ে। তখন তাৎক্ষণিক বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সহযোগিতায় সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সড়ে আসার সাহায্য করেন। তবে আজ রবিবার এখনো কোন গুলাগুলি শব্দ শুনতে পাওয়া যায়নি। এর পরও শনিবারের ঘটে যাওয়া গোলাগুলির শব্দে এলাকার লোকজনের মাঝে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে, আমাদের সীমান্তের বিজিবি সর্তক অবস্থায় টহল জোরদার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৪৪ পিলার নিকটবর্তী আবদুর রহমান,মোহামাদ হাশেম ও সাহাব মিয়া জানান,যেন অরাজক পরিস্থিতি। শনিবার ২২ অক্টোবর) সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে প্রথম একে-৪৭ রাইফেলস এর একটি গুলির আওয়াজ শুনেন তারা। বেলা ১২টা থেকে ভারি অস্ত্রের গুলির আওয়াজ
তাদেরকে তটস্থ করে তুলে। শিশু ও নারীরা দ্বিকবিদিক পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে নিরাপদ দূরত্বে স্বজনদের বাসা বাড়িতে।
তারা আরো বলেন, প্রথমে তারা বাড়ি না ছাড়লেও বেলা ২ টার পর সীমান্তের কয়েকটি গ্রাম থেকে লোকজন নিজেদের গরু-ছাগল নিয়ে পালিযে এসেছে আমতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকটি গুহাতে। পরে বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে লোকজন আাশ্রয় নিচ্ছে।
৪৫ নম্বর পিলার এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) মেম্বার ছাবের আহমদ জানান, তার এলাকার ওপারের সীমান্ত চৌকি পূনর্দখলে নিতে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে বলে তিনি ধারনা করছেন।
৫০ নম্বর পিলারের বাসিন্দা রাসেল জানান, শনিবার দুপুরে অনেক গোলাগুলি হয়েছে মিয়ানমান সীমান্ত ওপারের চৌকির দিকে। বেশ কয়েকটি গুলি আমাদের ভূখন্ডে এসে পড়েছে। কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে সেখানে কিছু একটা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা ফেরদৌস বলেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ঘটনায় আতংকিত কিছু লোক সীমান্ত থেকে পালিয়ে আসার খবর পেয়ে তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে ব্যবস্থা করা হয়েছে। অস্থায়ী আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে লোকজনকে শিবিরে আনার ব্যবস্থা করছেন তারা।