প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অগ্নিসন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই বিএনপি আন্দোলন করতে পারছে। কিন্তু বিএনপির যারা খুনের সঙ্গে জড়িত, অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত- তাদের ধরতে হবে। তাদের কোনো ছাড় নেই।
শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বৈঠকের মাঝপথে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। একদিনেই এই সম্মেলন শেষ হবে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের আরও জানান, এবার একদিনে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দিনব্যাপী এ সম্মেলন সকালে উদ্বোধনী পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। বিকেলে কাউন্সিল অধিবেশন হবে অর্থাৎ নেতৃত্ব নির্বাচন পর্ব। এরপর সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে।
তিনি জানান, ২২তম জাতীয় সম্মেলন সফল করতে বেশকিছু উপ-কমিটি করা হয়েছে। পরে কমিটির সদস্যদের নাম জানিয়ে দেওয়া হবে। তিনি জানান, আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে জনসভা করবে আওয়ামী লীগ। এতে সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জানান, আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিল সাদামাটাভাবে করা হবে। বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে ব্যয় কমাতে হবে ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতায়। তাই খরচ কমানোর জন্য আয়োজন হবে সাদামাটা। এ সময় তিনি সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও কতগুলো উপ-কমিটি করতে হবে। তবে যেহেতু বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা যাচ্ছে, ফলে এবারের সম্মেলন আমরা কোন সান-শওকত করে করব না। খুব সীমিত পরিসরে, অল্প খরচে, সাদাসিধেভাবে আমাদের সম্মেলন করতে হবে।
আগামীতে জনগণ আওয়ামী লীগকে আবারও ভোট দেবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের ওপরে মানুষের আস্থা রয়েছে বলেই টানা তিনবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, এবারও দেবে। কিন্তু যারা সন্ত্রাসী, খুনি, জনগণের অর্থ লুটপাটকারী, বোমা-গ্রেনেড হামলাকারী ও অর্থপাচারকারী- জনগণ তাদের বিশ্বাস করে না, ভোটও দেবে না।
সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি এবং কাজ করে যাবো। আমার কথা হচ্ছে, আমাদের উন্নয়নের কথাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ঠিক তেমনি ভবিষ্যতের জন্য যে আমরা পরিকল্পনা করছি সেটাও মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপির আমলে তাদের লুটপাট, দুর্নীতি, অগ্নিসন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, জঙ্গিবাদ, অত্যাচার-নির্যাতন, খুন-রাহাজানি এমন কোন অপকর্ম নেই যা তারা না করেছে। যে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে এসেছে, সেই দেশকে তারা ভিখারির দেশে পরিণত করে। হাত পেতে চলার দেশে পরিণত করে। সেখান থেকে বাংলাদেশকে তুলে এনে আজকে আমরা আত্মমর্যাদাশীল দেশে পরিণত করেছি। যে দেশকে বিশ্বের মানুষ আজ সম্মানের চোখে দেখে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, যারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত, অগ্নি সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত, আমি জানি তারা অনেকে লুকিয়ে ছিল। এখন বিএনপি মাঠে নেমেছে, তারাও মাঠে নামবে। এই সমস্ত আসামিদের কিন্তু ধরতে হবে। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। কারণ তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। জীবন্ত মানুষ হত্যা করেছে। চোখ-হাত কেটেছে, মানুষকে নির্যাতন করেছে। তাদের ছাড় নেই।
আইন তার আপন গড়িতে চলবে। আইন সকলের জন্য সমান। এটা তাদের মাথায় রাখতে হবে। রাজনীতি করবে রাজনীতি হিসেবে। কিন্তু সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী রাজনীতি এ দেশে চলবে না। এটা আমরা চলতে দেব না। এটা মাথায় রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ এই উপমহাদের পুরোনা সংগঠন। এই সংগঠন আরও শক্তিশালী হোক। মানুষের জন্য কাজ করে তাদের হƒদয় জয় করে আমরা ক্ষমতায় এসেছি। জনগণের ভোটে এসেছি, জনগণের আস্থা নিয়ে এসেছি। সেই আস্থা আমরা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। ১৪ বছর আমরা এদেশের মানুষের আস্থা বিশ্বাস ধরে রেখেছি।
আওয়ামী লীগ আরও বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এটা আমাদের মাথায় রেখেই এগিয়ে যেগে হবে। আর যারা সন্ত্রাসী খুনি, দশ ট্রাক অস্ত্র, গ্রেনেড হামলাকারী, বোমা হামলাকারী এদের দেশের জনগণ বিশ্বাস করে না। এদের পাশেও কোনো দিন থাকবে না। এদের ভোটও দেবে না। এটাই হলো বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়য়া। এরপর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে জাতীয় সম্মেলন ছাড়াও সারাদেশের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা, মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রস্তুতি ও কৌশল নির্ধারণসহ একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনায় প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে গত ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর অন্তর জাতীয় সম্মেলন করা হয়। সে অনুযায়ী যথাসময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। বর্তমান কমিটির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরেই আওয়ামী লীগের এ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হলো।