শেষ ওভারে জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের ১৬ রানের সমীকরণ মেলাতে হতো। লেগবাই থেকে আসা চার, রিচার্ড এনগারাভার মারা ছক্কার পর শেষ বলে সেটি নেমে আসে ৫ রানে। স্ট্রাইকে থাকা জিম্বাবুয়ের ফাস্ট বোলার ব্লেসিং মুজারাবানি সপাটে ব্যাট চালাবেন, সেটাই প্রত্যাশিত। বোলার মোসাদ্দেক হোসেনও দুই পাশের বড় বাউন্ডারি মাথায় রেখে বল করবেন, সেটিও অনুমান করা যাচ্ছিল। কিন্তু রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে সে বলটা জোরের ওপর করা মোসাদ্দেকের বলটিতে পরাস্ত হন মুজারাবানি। ক্রিজ ছেড়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড জিম্বাবুয়ের দশম ব্যাটসম্যান।
স্বাভাবিকভাবে জয়ের উদ্যাপনও শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশ ক্যাম্পে। বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের দলের ক্রিকেটাররা করমর্দন করতে করতে মাঠও ছেড়ে গেছেন। নাটকের শুরুটা তখন থেকেই। গ্যাবার বড় পর্দায় তখনো কোনো দলকে বিজয়ী ঘোষণা করেনি। সেখানে মুজারাবানির স্টাম্পিংয়ের ছবিটাই বারবার ভাসছিল।
দুই-তিনবার দেখার পরই বিষয়টি স্পষ্ট হয়… নুরুল বলটি স্টাম্প পার করার আগেই গ্লাভসবন্দী করেন। নিয়ম অনুযায়ী, বলটি ধরতে হবে স্টাম্প পার হওয়ার পর। বড় পর্দায় তখন ভেসে ওঠে ‘নো বল’। আম্পায়ার মারাই এরাসমাসের হাতের ইশায়ায় দুই দলের ক্রিকেটাররা মাঠে নেমে আসেন আবার। বাংলাদেশ দল নামে অবিশ্বাস সঙ্গী করে!
রান তাড়ায় জিম্বাবুয়েকে শুরুতে বড়সড় ধাক্কাই দেন বাংলাদেশের দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান। সেখানে প্রত্যাশিতভাবেই নেতৃত্ব দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম ওভারে উইকেট নেওয়াকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথম দুই বলেই দুটি, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেম্বা বাভুমাকে আউট করে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন।
আজও সে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। তাসকিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে থার্ডম্যানে ক্যাচ তোলেন ওয়েসলি মাধেভেরে। মোস্তাফিজ সেখানে সহজ ক্যাচটি লুফে নিলে বাংলাদেশ পেয়ে যায় আদর্শ সূচনা। তাসকিনের পরের ওভারে বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দেন ক্রেইগ আরভিনও।
পাওয়ারপ্লে-তে বাংলাদেশের আধিপত্য নিশ্চিত করেন মোস্তাফিজ। ষষ্ঠ ওভারে বোলিংয়ে এসে জোড়া আঘাত হানেন। প্রথমে মিল্টন শিম্বা, এরপর সিকান্দার রাজার গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করেন মোস্তাফিজ। শর্ট বলে তুলে মারতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে আফিফ হোসেনের হাতে ধরা পড়েন স্বপ্নের ফর্মে থাকা রাজা। মোস্তাফিজদের শরীরীভাষাই তখন বলে দিচ্ছিল, রাজার উইকেটটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল দলের জন্য।
৪৫ বল খেলে নাজমুল তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পূর্ণ করেন। এবারের বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের প্রথম ফিফটি এটি। মাইলফলক স্পর্শ করার পর হাত খোলেন নাজমুল। ব্র্যাড ইভান্সের ১৬তম ওভারে একটি ছক্কা ও দুটি চার মেরে বাংলাদেশ ইনিংসের গতিটা বাড়ান। সাকিব ২০ বল খেলে ২৩ রান যোগ করে আউট হলেও তাতে বড় ক্ষতি হয়নি বাংলাদেশের। আফিফ হোসেন এসে সে ছন্দটা ধরে রাখছিলেন স্বচ্ছন্দে।
কিন্তু নাজমুলের আউটে বাংলাদেশ প্রত্যাশিত গতিতে এগোয়নি বাংলাদেশের ইনিংস। ৭১ রান করতে তিনি খেলেন ৫৫ বল, ৭টি চারের সঙ্গে মারেন ১টি ছক্কা। শেষ দিকে মোসাদ্দেক হোসেন ও নুরুল হাসানের কাছ থেকে আজ উল্লেখযোগ্য কিছু পায়নি বাংলাদেশ। আফিফের ১৯ বল ২৯ রানের ইনিংসে ১৫০ রান পর্যন্ত যায় বাংলাদেশ। শেষ ৪ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ, রান এসেছে মাত্র ৩০।