Home » পরিবহন-জ্বালানি খাতে ধর্মঘট ডাকলে বা সমর্থন দিলে জেল-জরিমানা

পরিবহন-জ্বালানি খাতে ধর্মঘট ডাকলে বা সমর্থন দিলে জেল-জরিমানা

0 মন্তব্য 358 ভিউজ

বেআইনিভাবে অত্যাবশ্যকীয় সেবা খাতে ধর্মঘটে ডাকলে বা সমর্থন দিলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে আনা অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা আইন ২০২২-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর ফলে জনজীবন ব্যাহত হয় এমন কোনো ক্ষেত্রে ইচ্ছা করলেই আর ধর্মঘট বা হরতাল ডাকা যাবে না।

সোমবার (৩১ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটির খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০২১ সালের ৪ অক্টোবর মন্ত্রিসভা এই আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল। খসড়াটি এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের মাধ্যমে সংসদে যাবে। এরপর গেজেট আকারে এটি জারি করবে সরকার।

বৈঠক শেষে দুপুরে সচিবালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আইনটিতে ১৪টি ধারা আছে। ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে সরকার কোন বিষয়গুলোকে অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা হিসেবে ঘোষণা করবে। ৫ ধারায় বলা হয়েছে কিছু চাকরিতে কর্মরতদের নির্দিষ্ট এলাকা ত্যাগ না করার ক্ষমতা, আরেক ধারায় বলা হয়েছে ধর্মঘট, লকডাউন বা লে-অফ নিষিদ্ধ করার কথা। অনেক সময় শিল্প প্রতিষ্ঠানে লে-অফ বা নক আউট করা হয়। সরকার যদি মনে করে এগুলো জাস্টিফায়েড না তাহলে এগুলো নিষিদ্ধ করতে পারবে।’

‘যে সেবাগুলোকে সরকার মনে করবে অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা সেগুলোর নাম ঘোষণা করা যাবে। কয়েকটি সেবার নাম এখানে উল্লেখ করা আছে। যেমন ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, ই-কমার্স, ইলেকট্রনিক ও ডিজিটাল সেবা। সরকার মনে করে এই সেবাগুলো যখন খুশি তখন বন্ধ করে দিতে পারবে না।’

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, ডিজিটাল আর্থিক সেবা যেমন মোবাইল আর্থিক সেবা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন এবং এর সঙ্গে যোগ করা হয়েছে গ্যাস ও কয়লা। এগুলো অত্যাবশ্যক সেবা। এগুলোর বিষয়ে যদি কোনো অচলাবস্থা তৈরি হয় সেক্ষেত্রে সরকার ইন্টারফেয়ার করতে পারবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় কল্যাণে সরকার যেভাবে নির্দেশ দেবে সেভাবে পরিচালিত হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘স্থল, জল, রেল ও আকাশপথের যাত্রী বা পণ্য সেবাও অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বলে পরিচিত হবে। স্থল, সমুদ্র, নদী বা বিমানবন্দরের পণ্য খালাস, সশস্ত্র বাহিনীর পরিচালনায় কোনো প্রতিষ্ঠান বা এ সংক্রান্ত পরিষেবা। এর বাইরেও সরকার মনে করলে যে কোনো সেবাকে অত্যবশ্যকীয় সেবা ঘোষণা করতে পারবে। কোনো কারণে বাস বা ট্রাক চলাচলে কেউ হরতল করলো তখন সরকার এখানে ইয়ে.. (পদক্ষেপ নিতে) করতে পারবে। এটি অমান্য করলে শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘আইনটির খসড়া অনুযায়ী, দেশের প্রতিরক্ষার উদ্দেশে প্রয়োজনীয় পণ্য বা মালামাল উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিষেবা; খাদ্যদ্রব্য ক্রয়, বিক্রয়, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, মজুত বা বিতরণ কাজে নিযুক্ত সরকারি মালিকানাধীন বা সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিষেবা; হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্যসেবা বা অনুরূপ প্রতিষ্ঠান এবং ডিসপেনসারি সম্পর্কিত কোনো পরিষেবা; ওষুধ উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন, ক্রয় বিক্রয়সহ এসব কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা কারখানার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিষেবা; রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিষেবা; তেলক্ষেত্র, তেল শোধনাগার, তেল সংরক্ষণ এবং পেট্রোলিয়াম বা পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ উৎপাদন, পরিবহন, সরবরাহ ও বিতরণের কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিষেবা এবং টাকশাল ও নিরাপত্তামূলক মুদ্রণ কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত পরিষেবাকে সরকার গেজেট দিয়ে অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে।’

‘এর বাইরেও জনকল্যাণমূলক সেবা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এমন সেবা; জননিরাপত্তা বা জনগণের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ সেবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এমন সেবাকেও অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা ঘোষণা করতে পারবে। জনগণের অসহনীয় কষ্টের কারণ হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে এবং দেশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সারা দেশে বা দেশের কোনো অংশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ছয় মাসের জন্য কোনো চাকরি বা কোনো শ্রেণির চাকরি সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিষেবাকেও সরকার ছয় মাসের জন্য অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। প্রয়োজনে এর মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো যাবে।’

খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘যদি কেউ এ জাতীয় অপরাধ করে তাহলে সাধারণ ভাবে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হবে। আবার বেআইনি ধর্মঘট চলমান রাখার জন্য যদি সমর্থন দেয় তাহলে এক বছরের কারাদণ্ড ও অনূধ্র্ব ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। অনেকগুলো অপরাধের কথা এখানে বলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের মালিক যদি বেআইনি লেআউট চালু করে সেক্ষেত্রে অনূধ্র্ব ৬ মাস জেল ও অনূর্ধ্ব এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা দুটোই করা যাবে। কেউ যদি প্ররোচনা দেয় তাহলে মূল অপরাধে যে শাস্তি সেই শাস্তিই পাবে। বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে যদি সরকারি কোনো অফিস হয়। যেমন কোনো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের এমডি যদি লেঅফ ঘোষণা করেন তাহলে এর বাইরেও ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিং হবে।’

‘কিছু কিছু চাকরিতে কর্মরতদের সরকার নির্দেশ দিতে পারবে যে সরকারের নির্দেশ ছাড়া তারা দেশত্যাগ করতে পারবে না। এগুলো রুলে ডিটেইল বলা হবে’, যোগ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

আরও পড়ুন

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

আমাদের সম্পর্কে

We’re a media company. We promise to tell you what’s new in the parts of modern life that matter. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Sed consequat, leo eget bibendum Aa, augue velit.