ঠিক ২০১৬ সালে ব্যাঙ্গালুরুর সেই ম্যাচটির মত নয় হয়তো। তবে প্রায় একই রকম। শেষ মুহূর্তে এসে আবারও হারতে হলো বাংলাদেশকে। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২০ রান। নুরুল হাসান সোহান ছক্কা মেরে শেষ মুহূর্তের সলতেটা যেন আরেকটু জাগিয়ে তুলেছিলেন; কিন্তু পারলেন না আর ৫ রানে হেরে গেলো বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ফেভারিট দল ভারত। এশিয়ার এই ক্রিকেট পরাশক্তিধর দলটিও বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ ওভারের আগে পরাজয়ের শঙ্কায় ছিল। কিন্তু শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে আর্শদীপ সিংয়ের বলে ছক্কা হাঁকান নুরুল হাসান সোহান। তখন পরের ৪ বলে দরকার ছিল ১৩ রান। তৃতীয় বল ডট, চতুর্থ বলে ডাবল রান নেন সোহান।
জয় ছিনিয়ে নিতে হলে শেষ দুই বলে ১১ রান করতে হতো। তার মানে দুই বলেই দরকার ছিল ছক্কা হাঁকানোর। পঞ্চম বলে চার মেরে ব্যবধান কিছুটা কমান সোহান।
শেষ বলে দরকার ছিল ৭ রান। নুরুল ছক্কা মারলেও ম্যাচ ড্র হতো। কিন্তু সিঙ্গেল রানের বেশি নিতে পারেননি। যে কারণে ৫ রানের জয়ের উল্লাসে মাতে ভারত।
বুধবার অ্যাডিলেডে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ১৮৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে ভারত। টার্গেট তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে বাংলাদেশ। ৭ ওভারে ৬৬ রান করে জয়ের পথেই ছিল টাইগাররা। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সব শেষ হয়ে যায়।
বৃষ্টির পর খেলা যখন মাঠে গড়ায় তখন ওভার কমে যায় ৪টি। কার্টল ওভারে ১৬ ওভারে লক্ষ্য নির্ধারিত হয় ১৫১ রানের। বৃষ্টির আগে ৭ ওভারে ৬৬ রান করা বাংলাদেশের জয়ে পরের ৯ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৮৫ রান।
কিন্তু বৃষ্টিতে আউট ফিল্ড ভিজে যাওয়ায় আস্কিং রান রেট তাড়া করে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ।
বৃষ্টির পর খেলতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি বাংলাদেশ। কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৮ রান করা দলটি এরপর মাত্র ৪০ রানের ব্যবধানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায়।
দলীয় ৬৮ রানে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন। তার আগে ২৭ বলে সাত চার আর ৩ ছক্কায় করেন ৬০ রান। লিটন আউট হওয়ার পর পথ হারায় বাংলাদেশ।
লিটনের পর উইকেটে বেশি সময় স্থায়ী হতে পারেননি আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। ২৫ বলে ২১ রানে ফেরেন তিনি। এরপর ১২ বলে ১৩ আর ৫ বলে ৪ রানে ফেরেন সাকিব আল হাসান ও আফিফ হোসেন।
১২.৫ ওভারে ১০৮ রানে লিটন, শান্ত, আফিফ, সাকিব, ইয়ারিস ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আউজ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায়।
শেষ দিকে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান ও তাসকিন আহমেদ লড়াই করে গেলেও দলকে কাঙ্খিত জয় উপহার দিতে পারেননি। বাংলাদেশ থামে ১৬ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৫ রানে। ভারত জয় পায় মাত্র ৫ রানে।
বুধবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের জোড়া ফিফটিতে ভর করে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৪ রান করে ভারত।
দলের হয়ে ৪৪ বলে ৮ চার আর এক ছক্কায় সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলি।
টুর্নামেন্টের শুরু থেকে অফ ফর্মে থাকা লোকেশ রাহুল বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমেই তাণ্ডব শুরু করেন। ৩২ বলে তিন চার আর ৪টি ছক্কার সাহায্যে ৫০ রান করা রাহুলকে ফেরান সাকিব।
সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন সূর্যকুমার যাদব। ভারতীয় এই তারকা ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে সাজঘরে পাঠান সাকিব। তার আগে ১৬ বলে চারটি বাউন্ডারির সাহায্যে ৩২ রান করেন সূর্যকুমার।
বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের জোড়া ফিফটি আর সূর্যকুমারের ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংসের সুবাদে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে ভারত।
বাংলাদেশ দলের হয়ে ৪ ওভারে ৪৭ রান খরচ করে ৩ উইকেট নেন তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ। ৩৩ রানে ২ উইকেট নেন অধিনায়ক সাকিব।