প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে; জয় সহজ হবে না। নির্বাচনে জয়লাভ করা সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং। এবারে আরও কঠিন হবে। জিততে হলে জনসম্পৃক্ততা ও জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার চালাতে হবে।
গতকাল বুধবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, দলের এমপি হয়ে যাঁরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ছিলেন, বিরোধিতা করেছেন- তাঁদের উচিত শিক্ষা দেব। তিনি বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক উপায়ে সভা-সমাবেশ করলে সরকারের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না বলেও তিনি জানিয়েছেন।
বৈঠক শেষে উপস্থিত আওয়ামী লীগের কয়েকজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় এমপি হয়েও যাঁরা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দিয়েছেন, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন এবং নৌকা মার্কার প্রার্থী হারাতে ভূমিকা রেখেছেন- তাঁদের ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন। আগামী নির্বাচনে তাঁদের দলের মনোনয়ন না দেওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন সংসদ নেতা।
বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে বৈঠকে আলোচনা উঠলে শেখ হাসিনা বলেন, তারা সমাবেশ করছে করুক। গণতান্ত্রিক উপায়ে সভা-সমাবেশকে আমরা সমর্থন করি। তাদের তো আমরা সমাবেশ করতেও দিচ্ছি, বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু আগের মতো যদি আবারও সন্ত্রাস ও জ্বালাও-পোড়াও করে, তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না। কঠিনভাবে তাদের দমন করা হবে। এ বিষয়ে কোনো আপস করা হবে না।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় দলের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জাতীয় কাউন্সিলের আগেই দলের জেলা-উপজেলা সম্মেলনগুলো শেষ করতে হবে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করতে হবে। সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকেও শক্তিশালী করতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে হবে। নিজেদের কাজগুলো ঠিকমতো করতে হবে।
জনগণের কল্যাণ ও উন্নয়নে আরও বেশি করে কাজ করার জন্য দলীয় এমপিদের নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের মধ্যে ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রোধ করতে তৎপর থাকতে হবে। যখনই কোনো গুজব ছড়ানো হবে কিংবা অপপ্রচার চালানো হবে, তখনই তার জবাব দিতে হবে।
বৈঠকে সংসদ উপনেতা নির্বাচনের আলোচনা থাকলেও বিষয়টি ওঠেনি বলে জানান সরকারি দলের কয়েকজন এমপি। গত ১১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে সংসদীয় উপনেতার পদটি শূন্য হয়।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, কয়েকজন এমপি নানা প্রশ্নে নিজেদের ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। এর মধ্যে ঢাকা-১০ আসনের এমপি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আমরা আমলাতন্ত্র ও এনবিআরের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছি। কথায় কথায় এদের বিরূপ আচরণের মুখে পড়তে হয়। এই জায়গায় নজর দিতে হবে।
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলিসহ দু’জন এমপি বিভিন্ন জায়গায় দল ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তিসহ অপরাধকর্মে জড়িতদের যুক্ত করার বিষয়ে ক্ষোভ ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে সরকারি দলের এমপিদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন আতিউর রহমান আতিক, সারওয়ার জাহান বাদশা, আবুল হাসেম খান প্রমুখ।