প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে নিজেদের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেছেন ২০১৩ ও ২০১৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে আহত ব্যক্তি ও নিহতদের স্বজনরা৷ আজ রোববার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে ‘অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ: বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খণ্ডচিত্র’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের শুরুতেই একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। যেখানে সহিংসতার বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে।
২০১৩ সালে গাজীপুরে পেট্রলবোমায় সন্তানহারা হন কাভার্ডভ্যান চালক রমজান আলী। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি তো রাজনীতি করি না। আমি খেটে খাওয়া মানুষ। আমার চোখের সামনে আমার ছেলেকে আগুনে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিল, কিন্তু তাকে বাঁচাতে পারলাম না। এর চেয়ে এত কষ্ট পৃথিবীতে আর নেই।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে সন্তান হত্যায় দায়ীদের বিচার চাইলেন রমজান। ওই সময় অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমার ছেলের মায়ের মাথায় আপনি একটু হাত বুলিয়ে দেন।
২০১৩ সালে মাদারীপুর থেকে ঢাকা আসার পথে আগুনে পুড়ে নিহত হওয়া ১৭ বছরের কিশোর নাহিদের মা রুনি বেগমও বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানে। তিনি বলেন, আমার সন্তানকে দেখতে পারি নাই, দেখার সুযোগ পাইনি বিএনপি-জামায়াতের কারণে। আমি সন্তান হত্যার বিচার পাইনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমার সন্তানের বিচার চাই। আপনি আমার মা, আমি আপনার সন্তান। আমার সন্তান হত্যার বিচার আপনি করবেন।
রাজনৈতিক সহিংসতায় মোকাবেলায় কাঁচপুরে দায়িত্ব পালন করছিলেন বিজিবির নায়েক সুবেদার শাহ আলম। তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার আলেয়া জানান, দায়িত্বরত অবস্থায় বিএনপি-জামায়াতের একটি মিছিল থেকে তার স্বামী শাহ আলমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
আলেয়া আরো বলেন, তাকে জামায়াতের সন্ত্রাসীরা কাঁচপুরে কর্মরত অবস্থায় এমনভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে, যা মানুষ করতে পারে না।
তিনি বলেন, যতদিন বেঁচে থাকবো এই যন্ত্রণা কখনো ভুলতে পারব না। আমার স্বামী তো রাজনীতি করে নাই। তার তো কোনো অপরাধ ছিল না। সে তো দেশের কাজে নিয়োজিত। তাকে কেন এভাবে হত্যা করা হলো?
প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়ে বলেন, যারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে, তাদের কঠিন থেকে কঠিনতর বিচার চাই। আমি চাই আমার মতো কোনো নারী যেন এই বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের হাতে স্বামী হারিয়ে বিধবা না হয়। কোনো সন্তান যেন পিতৃহারা নয়।
২০১৩ সালের ৩১ মার্চে রাজশাহীর বোয়ালিয়ার সাহেববাজারে পেশাগত দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হন সাব ইনসপেক্টর মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, পুলিশের সদস্য হিসেবে গর্বিত। মানুষের সেবায় নিজের জীবন বিলিয়ে দিতেও কার্পণ্য করি না। আমি আহত হয়েছি, পঙ্গুত্ব বরণ করেছি, কিন্তু মনোবল হারাইনি।
এখনো হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এখনো আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমার পদোন্নতি বন্ধ করে দিয়েছে, কিন্তু আমি মনোবল হারাইনি।
আন্দোলনকারীদের আঘাতে শ্রবণশক্তি হারানো সাংবাদিক আবু সাইদ তামান্না উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। তিনি বলেন, রাজনীতি প্রতিযোগিতামূলক হবে, সুন্দর হবে, এটাই প্রত্যাশা করি। রাজনীতির নামে মানুষজনকে মেরে আহত করবে, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা এর বিচার চাই।