আব্দুল কাদির। এক সময়ের গার্মেন্টস কর্মী। প্রায় ১৪ বছর গার্মেন্টেসে চাকরি করেও বদলাতে পারেননি ভাগ্য। ফলে স্বচ্ছলতাও আসেনি সংসার জীবনে। অথচ এবার কয়েক মাসের ব্যবধানে মাত্র ৪ কাঠা জমিতে কেরালা জাতের আগাম শিম চাষে বদলে গেছে তার ভাগ্য।
শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়ন সন্ধাকুড়া গ্রামের ওই কৃষকের ভাগ্য বদলের কথা এখন এলাকার মুখে মুখে। অন্যদিকে তার ওই সাফল্যে স্থানীয়দের অনেকেই এখন উৎসাহী হয়ে উঠছেন শিম চাষে।
জানা যায়, দরিদ্র পরিবারের সন্তান আব্দুল কাদির পরিবারের ব্যয় নির্বাহে প্রায় ১৫ বছর আগে যোগ দেন রাজধানী ঢাকার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে। সে আয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোন রকমে চললেও ভবিষ্যৎ চিন্তা যেন তার পিছু ছাড়েনি। এরই মধ্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। বন্ধ হয়ে যায় গার্মেন্টস। একমাত্র আয়ের উৎস বন্ধ হওয়ায় সংসারের খরচ যোগানে অনেক হিমসিম খেতে হয় তার।
এরপর তিনি স্ব-পরিবার নিয়ে চলে আসেন সন্ধাকুড়া নিজ এলাকায় পৈত্রিক ভিটায়। কিন্তু কৃষি আবাদের জন্য নিজস্ব কোন জমি না থাকায় ভাবতে থাকেন নতুন কর্মের মাধ্যমে আয় রোজগারের। তার পিতার সঙ্গে আলোচনা করে কৃষি ফসল আবাদের জন্য অল্পকিছু জমি নিয়ে বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করেন। পাশাপাশি একটা ব্যবসাও গড়ে তোলেন তিনি। হঠাৎ দ্বিতীয় ধাপের পাহাড়ি ঢলে সবজি চাষে ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়। বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও কৃষি ফসল উৎপাদনে হাল ছাড়েননি তিনি।
একদিন ফেসবুকে কেরালা জাতের শিম চাষের পদ্ধতি ও বীজ বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখতে পান তিনি। এতেই যেন বদলে গেল তার ভাগ্য। ইন্ডিয়ার কেরালা জাতের আগাম শিম বীজ রোপণের বিজ্ঞাপন দেখে শিম আবাদের দিকে ইচ্ছে জাগে তার। নতুন কর্মসংস্থান ও সন্তানদের ভবিষ্যত উন্নতির চিন্তা করে নিয়ে ১ কেজি পরিমাণ বীজ ক্রয় করেন ৪ হাজার টাকায়। তার পৈত্রিক আবাদি জমিতে আধা কেজি পরিমাণ শিমের বীজ রোপণ করেন।
বাকি শিম বীজ দেন একই এলাকার আরেক কৃষককে। কৃষক আব্দুল কাদির জমিতে বীজ রোপণের পর থেকে তার বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা, কীটনাশক সারসহ অন্যান্য সকল খরচ মিলিয়ে প্রায় ১৫-১৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল তার। নতুন এই শিম বীজ এলাকায় প্রথম বারের মতো রোপণ করায় কেউ উৎসাহ দেয়নি তাকে। বরং সবগুলি গাছ কর্তনের পরামর্শ দেন অনেকে। কারও কথায় কান না দিয়ে শিম বাগান পরিচর্যার পাশাপাশি ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে থাকেন কৃষক আব্দুল কাদির।
সরেজমিনে গেলে আব্দুল কাদির জানান, বীজ রোপণের ৪৫ দিন পর প্রতিটি গাছে ফুল ফুটে। সবাইকে তাক লাগিয়ে বীজ রোপণের আড়াই মাস পর থেকে শুরু হয় বিপুল পরিমাণ শিম বিক্রি। বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের কাছে ন্যায্য মূল্যে শিম বিক্রি করে যাচ্ছেন তিনি।
এ যাবৎ প্রায় দুই লাখ টাকার শিম বিক্রি হয়েছে তার। তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকলে আগামী দুই মাসের মধ্য আরও দেড় থেকে দুই লাখ টাকার শিম বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নিজের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে আরও বেশ কিছু পরিবারের কর্মসংস্থান। আগামী বছর আরও বড় পরিসরে শিম চাষ করা হবে বলেও জানান তিনি।
তার মতে, কোন কর্মকে ছোট করে ভাবা ঠিক নয়। বিভিন্ন চাকরির পেছনে অথবা বেকার না ঘুরে অনাবাদি জমিতে কৃষি শাকসবজি উৎপাদন করেও লাভবান হওয়া সম্ভব।
এলাকার ইউপি সদস্য মো. গোলাম কিবরিয়াসহ স্থানীয় কৃষক ও কৃষাণীরা বলেন, এখন তার সবজি বাগান এক নজর দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন অনেকেই। ফলন ভাল হওয়ায় আগামীতে এ জাতের শিম তারাও চাষ করবেন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন দিলদার বলেন, আব্দুল কাদির একজন কৃষি উদ্যোক্তা। কৃষিতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আসতে হয়েছে তার। ৪ কাঠা জমিতে লাভজনক ফসল শিমের আগাম চাষ করে তিনি এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
এক্ষেত্রে তাকে কৃষি বিভাগের তরফ থেকে পরামর্শসহ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে তাকে দেখে এলাকার অনেকে এখন ওই জাতের শিম চাষে উৎসাহী হয়ে উঠছেন।