যুক্তরাজ্য মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটির সাম্প্রতিক প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তাতেই দেশটি মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি শূন্য দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। মূলত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য ও পরিবারগুলো আক্রান্ত হওয়ায় অর্থনীতিতে এ সংকোচন ঘটে। সাধারণত একটি দেশের অর্থনীতি পরপর দুই প্রান্তিকে সংকুচিত হলে তখন দেশটি মন্দায় আক্রান্ত বলে ধরে নেওয়া হয়। ধারণা করা হয়েছে, চলতি বছরে শেষে, অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকেও দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হবে। আর সেটি হলে যুক্তরাজ্য মন্দায় আক্রান্ত বলে ধরে নেওয়া হবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড তথা যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুই বছরের মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছে। তারা বলেছে, এ সময় হবে যুক্তরাজ্যের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। খাদ্য, জ্বালানি, বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে মন্দার আশঙ্কা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। উচ্চ পণ্যমূল্যের কারণে যুক্তরাজ্যের পরিবারগুলোর ওপর নানা ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। সে কারণে তারা বাধ্য হয়ে খরচ কমিয়ে দিয়েছে। আর তাতে সংকুচিত হতে শুরু করেছে অর্থনীতি।
কোনো দেশে যখন মন্দা শুরু হয়, তখন দেশটির কোম্পানিগুলোর আয় কমে যায়। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে বেকার মানুষের সংখ্যা। তাতে স্নাতকোত্তর ও স্কুল ছেড়ে দেওয়া যুবকেরা চাকরি পেতেও সমস্যার মুখোমুখি হন। মন্দার কারণে সরকার রাজস্ব আয় কমে যাওয়ায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করতে পারে না।
যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধারণা করছে, ১৯২০ সালের পর দীর্ঘতম মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশটি। এতে বেকারত্বের হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। দেশটির বিস্ট্রল বেয়ার নামের কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিবিসিকে জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসার খরচ যে পরিমাণ ও যেভাবে বেড়ে গেছে, তা কীভাবে ক্রেতাদের ওপর চাপানো যায়, সে বিষয় বিবেচনা করছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবসার বাড়তি খরচের পুরোটা ভোক্তার ওপর চাপাতে পারি না। কারণ, ভোক্তা কমে যাক, সেটা আমরাও চাই না। তাই ভোক্তাদের ওপর বেশি চাপ তৈরি না করে কীভাবে দাম সমন্বয় করা যায়, সেটি খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার জন্য।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বই এখন পণ্যের উচ্চমূল্যের সঙ্গে লড়াই করছে। তবে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বিশ্বের অন্য বড় অর্থনীতির দেশগুলোর তুলনায় বেশি খারাপ। যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় (ওএনএস) সম্প্রতি দেশটির অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যবসায় বিনিয়োগ অনেক কমে গেছে। এমনকি তা করোনা–পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে অনেক নিচে রয়েছে। ওএনএস বলছে, যুক্তরাজ্যের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে মূলত শিল্পের উৎপাদন কমে যাওয়ায়।
ওএনএসের পরিচালক ড্যারেন মরগান বলেছেন, ভোক্তাকেন্দ্রিক শিল্পকারখানাগুলো গত প্রান্তিকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিল। যে কারণে এসব শিল্পের পণ্য বিক্রয়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিক্রি আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। তাতে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ তাঁর দৈনন্দিন খরচে লাগাম টেনেছেন।