রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ রাশিয়া ও চীনের স্বার্থের ক্ষতি করতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সামরিকীকরণের জন্য পশ্চিমাদের অভিযুক্ত করেছেন। এ মন্তব্য করে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে হতে যাওয়া ‘জি-২০’ সম্মেলনে রাশিয়া ও পশ্চিমা নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মঞ্চ প্রস্তুত করলেন তিনি। ওই সম্মেলনে ল্যাভরভ রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রুয়ারিতে মস্কো ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর পর এটি প্রথম এ ধরনের সম্মেলন। ব্যস্ততার কারণেই প্রেসিডেন্ট পুতিন এবারের ‘জি-২০’ সম্মেলনে যোগ দিতে পারছেন না বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।
এবারের সম্মেলনের বিষয়সূচিতে ইউক্রেন বিশেষ প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোও এই ইস্যুতে সরাসরি রাশিয়ার কড়া সমালোচনার সুযোগ পাবে। তারা চীন ও ভারতকেও রাশিয়ার সমালোচনা করতে চাপ দেবে।
ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর চীন ও ভারত এ নিয়ে মস্কোর সমালোচনা না করলেও সম্প্রতি যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে তারা। কম্বোডিয়ার নম পেনে আসিয়ানের সম্মেলন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় ল্যাভরভ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করেন। রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াকে সামনের দশকগুলোর কৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক লড়াই ক্ষেত্র মনে করে।
ল্যাভরভ সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের ন্যাটো মিত্ররা এই অঞ্চলের প্রভু হতে চাইছে। জো বাইডেনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল হচ্ছে আঞ্চলিক সহযোগিতার সমন্বিত কাঠামোকে বাইপাস করার চেষ্টা এবং এই অঞ্চলকে সামরিকীকরণ করা, যার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে রাশিয়ার স্বার্থকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
এদিকে বাইডেন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর নেতাদের জানান, ওয়াশিংটন এমন এক ইন্দো-প্যাসিফিক বানাতে প্রস্তুত যা অবাধ ও উন্মুক্ত, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ এবং উপযোগিতা ও নিরাপত্তা আছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারত্বের ওপরও জোর দিয়েছেন।
রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র কেউই আসিয়ানের সদস্য নয়। তবে বিশ্বের একাধিক নেতাই বালিতে কিছুদিন পর হতে যাওয়া ‘জি-২০’ সম্মেলনের আগে আসিয়ানের সম্মেলনে উপস্থিত হন।
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর পর পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর ওপর যে বিপুল নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া এশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ঘনিষ্ঠতা আরও জোরদার করতে চায়। সোভিয়েত পরবর্তী বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে আধিপত্য তার পাল্টায় চীন ও রাশিয়াকে বিদ্রোহী হিসেবে দেখাতে চাইছেন পুতিন।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও রাশিয়া ও চীনকে তার প্রধান দুই বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখে।