Home » নতুন সঙ্গীকে নিয়ে কোন পথে এগোবেন সি

নতুন সঙ্গীকে নিয়ে কোন পথে এগোবেন সি

0 মন্তব্য 97 ভিউজ

চীনে দ্য ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন শুরু হচ্ছে আগামীকাল রোববার। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ক্ষমতার লাগাম টেনে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এই অধিবেশনকে।

কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণ সি চিন পিংয়ের হাতের মুঠোয়। তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার মতো ব্যক্তি দলে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কালকের বার্ষিক সভায় প্রায় তিন হাজার প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছে। এখানে আসবে বড় পরিবর্তনের ঘোষণা।

প্রধানমন্ত্রী যিনি হবেন, তাঁকে বিশ্বের দ্বিতীয় বড় অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সামলাতে হবে। সির পরই তিনি হবেন চীনের ক্ষমতাধর ব্যক্তি।
চীনের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং প্রথম দিনে অধিবেশনের কেন্দ্রে থাকবেন। অধিবেশনের শেষে নতুন প্রধানমন্ত্রী সেই কেন্দ্রস্থলে আসবেন। আর লি কিয়াংয়ের নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি এখন অনেকটাই নিশ্চিত।
কেকিয়াং ও কিয়াং দুজনের নামে মিল রয়েছে। । তবে সির প্রতি আনুগত্যের প্রশ্নে দুজনের ভূমিকা ভিন্ন।

কমিউনিস্ট পার্টি কংগ্রেসের অক্টোবরের অধিবেশনে পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির সাত সদস্যকে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই দলে কেবল সির অনুগতরাই স্থান পেয়েছেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়েছেন কিয়াং।

অধিবেশনে মন্ত্রিপরিষদে ও বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে বদল আসবে। ধারণা করা হচ্ছে, সি চিন পিংয়ের অনুগতদের প্রাধান্যই থাকবে। সির অনুগত হওয়ার অর্থ এমন নয় যে তাঁরা অযোগ্য হবেন। প্রশ্ন হলো তাঁরা নির্ভয়ে ও সহজাতভাবে সিকে পরামর্শ দিতে পারবেন কি না।

বাণিজ্যিক খাতে অভিজ্ঞ এক ব্যক্তিত্ব বিবিসিকে বলেন, হতে পারে সি নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে কাজ এগিয়ে নিতে পারেন, আবার এমনটাও হতে পারে বিশেষ একটি গোষ্ঠীর মধ্যে তিনি নিজেকে আটকে ফেলবেন।নতুন প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং হবেন, এটা প্রায় নিশ্চিত। তিনি যদি শেষ দিনে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন, তাহলে তিনি চমক তৈরি করতে পারবেন।
গত বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় লকডাউনের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন লি কিয়াং। সে সময় চীনের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তিনি সমালোচিত হন। এ কারণে কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে তাঁর যাওয়া নিশ্চিত হওয়ায় অনেকেই বিস্মিত।

করোনাভাইরাসের লকডাউনের সময় চীনের সাংহাই শহরে কড়া লকডাউন জারি হয়। সে সময় অনেকের কাছেই ওষুধ ও খাবার সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারেনি সরকারি কর্তৃপক্ষ। সে সময় খাদ্যসংকটে পড়ে চীনা জনগণ। অনেকেই পচা সবজি দেওয়া হয়েছে, এমন ছবি প্রকাশ করেছে।

জিরো কোভিড নীতি ও লকডাউনের বিরুদ্ধে চীনের বিভিন্ন শহরে মানুষ বিক্ষোভ করেছে। লকডাউনের তদারকির দায়িত্বে থাকা লি কিয়াংয়ের ভূমিকাও সে সময় প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় লকডাউনে লি কিয়াংয়ের ভূমিকা যা-ই হোক না কেন, চীনের ব্যবসায়ীদের কাছে উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল। তিনি চীনের বাণিজ্য সম্প্রসারণে ভূমিকা রেখেছেন।

চীনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট জর্জ উত্তকে বলেছেন, লি কিয়াং যথেষ্ট কেতাদুরস্ত ও ভালো পরিচালক। তবে সির প্রতি আনুগত্যের জন্যই তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ পাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, চীনের জিরো কোভিড নীতির কারণে ব্যবসা খাত এখনো ক্ষতিগ্রস্ত। তবে উত্তকে মনে করেন না যে এ পরিস্থিতির জন্য কেবল লি কিয়াং দোষী।

লি কিয়াং ব্যবসা খাতকে নানাভাবে গতিশীল করতে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি বিদ্যুৎ-চালিত গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলাকে সাংহাইতে নিয়ে এসেছেন। ২০১৯ সালে সাংহাইয়ের পাইলটমুক্ত বাণিজ্যিক জোনেরও প্রচলন করেন লি কেকিয়াং। তিনি বলেছেন, এটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য উন্মুক্ত ক্ষেত্র হয়ে উঠবে।

তবে লি কিয়াং কতটা ক্ষমতাধর হতে পারবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এমন হতে পারে, সির সমর্থন পাওয়ার কারণে তিনি নির্ভয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। অথবা এ ছায়া থেকে বের হয়ে আলাদা অবস্থান তৈরি করা সির জন্য কঠিনও হতে পারে।

২০১৬ সালে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লি কিয়াং জিয়াংসু প্রদেশে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান বিস্তৃত করতে ভূমিকা রাখেন। তিনি আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা ও অন্য নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তবে সে সময়টা ছিল আলাদা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন।

সির সঙ্গে কিয়াংয়ের সুসম্পর্ক এরও আগে থেকে। জিয়াংসুতে আসার আগে তিনি সাংহাইয়ের দক্ষিণে সমৃদ্ধিশালী ঝেজিয়াং প্রদেশে ছিলেন। সে সময় প্রাদেশিক দলের প্রধান ছিলেন সি চিন পিং। এরপর লি তাঁর চিফ অব স্টাফ হন। তাঁরা গভীর রাত পর্যন্ত একসঙ্গে কাজ করতেন।

তবে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে এত কাছ থেকে কাজ করেননি সি। লি কেকিয়াং বরং সির একজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। দলের শীর্ষ পদের জন্য সির সঙ্গে তিনিও প্রার্থী ছিলেন।
অর্থনীতিবিদ লি কেকিয়াং প্রতিপক্ষ কমিউনিস্ট ইয়ুথ লিগের মাধ্যমে চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে ঢোকেন। শীর্ষ পদে না আসতে পেরে তিনি সির প্রধানমন্ত্রী হন।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর লি কেকিয়াং রাস্তায় বিক্রেতাদের ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এতে অর্থনীতি আবার সচল হতে পারে। তবে বেইজিং থেকে আবারও পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়।

সির সিদ্ধান্তে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেননি লি কেকিয়াং। এমন কথাও প্রচলিত, লি কেকিয়াং সাবেক নেতা হু জিনতাওয়ের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। গত বছর পার্টি কংগ্রেস সির নির্দেশে তাঁকে সরিয়ে দেয়।

উত্তকে বলেন, চীনে এখন মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত হয়েছে। তবে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সন্তানেরা উন্নত জীবন পাবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কা আছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কিয়াংয়ের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করছে চীনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।

আরও পড়ুন

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

আমাদের সম্পর্কে

We’re a media company. We promise to tell you what’s new in the parts of modern life that matter. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Sed consequat, leo eget bibendum Aa, augue velit.