Home » রক্তে ভিজে লাল হয়েছিল পিচঢালা কালো পথ

রক্তে ভিজে লাল হয়েছিল পিচঢালা কালো পথ

0 মন্তব্য 66 ভিউজ

দিনটি ছিল শনিবার। সেদিনের পড়ন্ত বিকেলে নারকীয় গ্রেনেড হামলার বীভৎসতায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কটিতে রক্তগঙ্গা বয়ে গিয়েছিল। মানুষের রক্তে ভিজে লাল হয়ে গিয়েছিল পিচঢালা কালো পথ। সেই সঙ্গে ছিল শত শত মানুষের আর্তচিৎকার। প্রাণ বাঁচানোর জন্য মুমূর্ষুদের আকুতি। কাতর আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় এক মর্মান্তিক দৃশ্য।
স্মরণকালের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকী আজ সোমবার। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় তিন শত মানুষ।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এসব বাণীতে ২১ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন তারা।

সেদিন যা ঘটেছিল

সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সমাবেশ শেষে শান্তি মিছিলও হওয়ার কথা ছিল। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সেই শান্তি মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল। তাই মঞ্চ নির্মাণ না করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

তখন বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। সমাবেশ মঞ্চ থেকে শেখ হাসিনা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তৃতা শেষ করে তাঁর হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগোচ্ছিলেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে। মুহূর্তেই শুরু হলো নারকীয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে লাগল একের পর এক গ্রেনেড। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিণত হলো মৃত্যুপুরীতে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১৩টি গ্রেনেড হামলার বীভৎসতায় মুহূর্তেই রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। রক্তগঙ্গা বয়ে যায় এলাকাজুড়ে। শান্তিপ্রিয় অসংখ্য মানুষের হাত-পাসহ দেহের বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে।

ভয়ংকর সেই গ্রেনেড হামলার মূল টার্গেট ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দেহরক্ষীদের আত্মত্যাগে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। মানববর্ম রচনা করে তাঁর জীবন রক্ষা করে গাড়িতে উঠিয়ে দেন তাঁরই সহকর্মীরা। এর পরও শেখ হাসিনাকে হত্যার শেষ চেষ্টা হিসেবে ঘাতকচক্র তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ১২টি গুলি ছুড়েছিল। সৌভাগ্যবশত সেই গুলিবর্ষণ থেকেও রক্ষা পান বর্তমান সরকারপ্রধান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর সাহসিকতার সঙ্গে গুলিতে ক্ষতবিক্ষত গাড়িটি দ্রুতগতিতে চালিয়ে শেখ হাসিনাকে ধানমন্ডির সুধা সদনের বাসভবনে পৌঁছে দিয়েছিলেন তাঁর গাড়িচালক।

অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে তখন দেখা যায় আরেক ট্র্যাজেডি। গ্রেনেড হামলায় আহতরা যখন নিজেদের জীবন বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টারত আর তাদের উদ্ধারে ছুটে এসেছিলেন শত শত মানুষ, ঠিক তখন তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ বাহিনী। আহতদের রক্ষার বদলে পুলিশ নির্মমভাবে লাঠিচার্জ শুরু করে। পুলিশের ছোড়া টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চারপাশ। এই তাণ্ডবের মধ্যেও সেদিন দলীয় নেতাকর্মী আর সাধারণ মানুষ যিনি যেভাবে পেরেছেন, গ্রেনেডে ক্ষতবিক্ষত মানুষদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন।

যারা নিহত হন

বর্বরতম গ্রেনেড হামলায় সেদিন ঝরে যায় ২৪টি তাজা প্রাণ। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে আড়াল করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে ঘটনাস্থলেই জীবন বিলিয়ে দেন তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স কর্পোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান মারা যান ২৪ আগস্ট। আরও নিহত হন– আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ সেন্টু, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), ঢাকা মহানগরের ৫৮ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুফিয়া বেগম, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা মমতাজ রীনা, মহিলা আওয়ামী লীগ কর্মী রেজিয়া বেগম, জাতীয় শ্রমিক লীগ কর্মী নাসির উদ্দিন সর্দার, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড রিকশা শ্রমিক লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ হানিফ, ৬৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল হোসেন, যুবলীগ বালুঘাট ইউনিটের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, হোসেনপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি লিটন মুন্সী লিটু, ৮৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা আতিক সরকার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ কর্মী ও রিরোলিং মিল ব্যবসায়ী রতন সিকদার, ছাত্রলীগ কর্মী ও সরকারি কবি নজরুল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মামুন মৃধা, জামালপুরের আওয়ামী লীগ কর্মী আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের কর্মী ইছহাক মিয়া, মো. শামসুদ্দিন, মমিন আলী, আবুল কাসেম ও জাহেদ আলী।

অন্যদিকে গ্রেনেড হামলাকালে শেখ হাসিনাকে ঘিরে মানবঢাল তৈরি করা ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের মাথায় অসংখ্য স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। প্রায় আড়াই বছর অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ এবং দেশ-বিদেশে চিকিৎসার পর ২০০৬ সালের ২৭ নভেম্বর মারা যান তিনি। পরের কয়েক বছরে এই গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত আরও কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। যারা গ্রেনেডের স্প্লিন্টারবিদ্ধ হয়ে জীবন্মৃত বেঁচে ছিলেন; দুঃসহ যন্ত্রণা বয়ে আসছিলেন।
অন্যদিকে প্রাণে বেঁচে গেলেও এখনও দেহে অসংখ্য ঘাতক স্প্লিন্টারের তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে পথ চলছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতারাসহ অনেকেই।

আরও পড়ুন

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

আমাদের সম্পর্কে

We’re a media company. We promise to tell you what’s new in the parts of modern life that matter. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Sed consequat, leo eget bibendum Aa, augue velit.