বগুড়ার সেই রিকশাচালকের মাস্টার্স পাস করা স্ত্রী সীমানুর খাতুনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাকরি দিলেন। সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের প্রাথমিক শাখায় সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির নিয়োগপত্র প্রদান করেন।
নিয়োগপত্র প্রদানকালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘরের জন্য ৩ বান্ডিল ঢেউটিন ও একটি ল্যাপটপ প্রদান করা হয়। এ ছাড়া লেখাপড়া এবং তিনবেলা খাবার খেতে গিয়ে যে ঋণ হয়েছে, সেটি পরিশোধেরও দায়িত্ব নেন বগুড়া জেলা প্রশাসক।
বগুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বগুড়ার গাবতলী উপজেলা নশিপুর ঠিকাদার পাড়ার ফেরদৌস মন্ডলের লেখাপড়ার ইচ্ছে থাকলেও পারিবারিক কারণে কিশোর বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয়। প্রাথমিক স্কুল পেরিয়ে যাওয়ার পর অভাবের কারণে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। এক পর্যায়ে সে বিয়ে করেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার নাংলু গ্রামের সীমানুর খাতুনকে। সে সময় তার স্ত্রী সীমানুর এসএসসি পরীক্ষার্থী। নিজে লেখা পড়া করতে না পেরে স্ত্রীকে লেখাপড়া করান। রিকশা চালিয়েই স্ত্রীর ভরন-পোষণ ও লেখাপড়া চালিয়ে যান। স্বামীর রিকশা করেই যেতেন কলেজে। সংসারের বাড়তি আয় করতে গৃহবধূ সীমানুর পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে করতেন দর্জির কাজও।
ধুনট কলেজ থেকে বিএ পাসের পর মাস্টার্স সম্পন্ন করতে ভর্তি হন বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী সরকারি আযিযুল হক কলেজে। এই কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিভাগ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে মাস্টার্স পাস করে উচ্চ শিক্ষার আশা পূরণ করেছেন সীমানুর। রিকশা চালক ফেরদৌস ও তার স্ত্রী সীমানুরের জীবনী নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ পেলে প্রধানমন্ত্রীর চোখে পড়ে। বিষয়টি জেনে প্রধানমন্ত্রী চাকরি প্রদানের দ্রুত ব্যবস্থা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম স্কুল শিক্ষকের নিয়োগপত্রটি প্রদান করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মাদ আল মারুফ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেজবাউল করিম, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া, বগুড়া কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. আল মামুন সরদার প্রমুখ।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, নিয়োগপত্র পেয়ে গৃহবধূ সীমানুর খাতুন স্কুলে যোগদান করেছেন। চাকরির সঙ্গে মিলেছে সীমানুরের স্বামী রিকশাচালক ফেরদৌস মন্ডলের রিকশা কেনার ঋণ পরিশোধের ২৫ হাজার টাকা, বাড়ি সংস্কারের টিন ও একটি ল্যাপটপ প্রদান করা হয়েছে।
ফেরদৌস মন্ডল ও তার স্ত্রী সীমানুর খাতুন জানান, অনেক ঋণ আর পরিশ্রম করে সংসারে টিকে থাকতে হয়েছে। রিকশা চালিয়ে যখন তিনবেলা ভাত হয়নি, তখন সে দর্জির কাজ শুরু করেন।