গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে এই যুদ্ধ ১০৬তম দিনে পৌঁছেছে। দীর্ঘ এই যুদ্ধে ২৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৬২ হাজারেরও বেশি মানুষ।
যদিও এই যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল- ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করা এবং হামাস যোদ্ধাদের হাতে আটক জিম্মিদের উদ্ধার করা। তবে এ দুটোর কোনওটিই এখনও পর্যন্ত অর্জন করতে পারেনি ইসরায়েল।
এই অবস্থায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর চার জ্যেষ্ঠ কমান্ডার স্বীকার করলেন, হামাসের সঙ্গে চুক্তি ছাড়া গাজায় আটক জিম্মিদের উদ্ধার কোনওভাবেই সম্ভব নয়।
তাদের মতে, হামাসকে নির্মূল করা, আবার একই সঙ্গে জিম্মিদের মুক্ত করা পুরোপুরি ‘অপ্রাসঙ্গিক’।
মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘নিউইয়র্ক টাইমস’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কথা জানান তারা। এই কমান্ডারদের কেউই নিজের পরিচয় প্রকাশ করেননি।
তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) পরবর্তীতে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা কমান্ডারদের এ ধরনের মূল্যায়ন নিয়ে জ্ঞাত নয় এবং তাদের মতামতের সঙ্গে আইডিএফ’র অবস্থানের কোনও মিল নেই।
নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই কমান্ডাররা জানিয়েছেন, হামাসের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে তারা অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন।
তারা আরও জানিয়েছেন, রাজনৈতিক নেতাদের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। হামাসের সঙ্গে চুক্তি ছাড়া জিম্মিদের উদ্ধার কোনওভাবেই সম্ভব নয়।
ওই কমান্ডাররা আরও জানান, হামাসের সঙ্গে গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর— যুদ্ধের যে গতি ছিল— সেটি পরবর্তীতে ধরে রাখা যায়নি। তারা ভেবেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে গাজা সিটি, খান ইউনিস এবং রাফাহ ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
এখন পর্যন্ত গাজার উত্তরাঞ্চলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারলেও, দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসে হামাসের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ছে ইসরায়েলি সেনারা। অপরদিকে রাফাহতে তারা এখনও কোনও ধরনের অভিযান শুরুই করতে পারেনি।
এছাড়া হামাসের গোপন সুড়ঙ্গ নিয়েও কথা বলেছেন এই কমান্ডাররা। তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরুর আগে তারা ভেবেছিলেন গাজায় হামাসের ১০০ মাইল সুড়ঙ্গ রয়েছে। কিন্তু এখন তারা বুঝতে পারছেন ছোট্ট এ উপত্যকায় ৪৫০ মাইলেরও বেশি সুড়ঙ্গ তৈরি করেছে হামাস। আর সুড়ঙ্গগুলো এতটাই জটিল যে, যদি সেখানে কোনও জিম্মিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হয় তাহলে তাদের জীবিত উদ্ধারের কোনও নিশ্চয়তা নেই।