গতবার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বিশেষ বিমানে করে মুস্তাফিজুর রহমানকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল দিল্লি ক্যাপিটালস। ধারণা করা হাচ্ছিল নিয়মিত একাদশে সুযোগ পাবেন। কিন্তু বাস্তবতা ছিল উল্টো। ২ ম্যাচে ১ উইকেটেই থেমে গিয়েছিল তার দিল্লি-অধ্যায়। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মেন্টর সৌরভ গাঙ্গুলী বলেছিলেন, ‘মুস্তাফিজের ফিল্ডিং ডিরেকশনে ঘাটতি আছে। প্রায় সময়ই দেখা যায় ওর বলে খোঁচা মেরে চার হচ্ছে, ক্যাচ মিস হচ্ছে, এক রানের জায়গায় দুই রান হচ্ছে।
ঠিক জায়গায় ফিল্ডিং সাজানো থাকলে এমনটা হতো না। এই দিক দিয়ে ওকে উন্নতি করতে হবে।’ চলতি আইপিএলে দেখা যাচ্ছে বিপরীত চিত্র। উইকেটের পেছনে মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো একজন থাকার কারণেই কি না বদলে গেলেন ফিজ! চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে প্রথম ম্যাচেই ৪ উইকেট নিয়ে হলেন ম্যাচসেরা। দ্বিতীয় ম্যাচে শিকার ২ উইকেট। ফিজ আর মাহির জমে ওঠা রসায়নটা বিশ্লেষকদেরও মনে ধরছে।
‘ধোনিকে দেখে বেশ নির্ভার মনে হয়েছে। মুস্তাফিজ যখন বোলিংয়ে এলো, ধোনিকে সে নানা কিছু জিজ্ঞেস করছিল। চেন্নাই ও ভারতের ক্রিকেটকে ধোনি এভাবেই দিনের পর দিন সার্ভিস দিয়ে আসছে।’ বলছিলেন কিউই পেসার মিচেল ম্যাক্লেইনগান। দুই ম্যাচেই বোলিংয়ের সময় মুস্তাফিজের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন ধোনি।
বিষয়টা মনে ধরেছে সুনীল গাভাস্কারের ছেলে রোহান গাভাস্কারের ‘এক হলো নিজের অভিজ্ঞতা, আরেকটা দলের অভিজ্ঞতা। ফিজ নিয়মিত ধোনির সঙ্গে পরামর্শ করছে। ভাই, আমার মনে হয় এই পিচে এভাবে করলে ভালো। সেই সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছে। ভ্যারিয়েশনেই মুস্তাফিজ বাজিমাত করছে। কোন্ ভ্যারিয়েশন, কীভাবে করছে এসবের ওপর নির্ভর করে। প্রথম ম্যাচ বা এই ম্যাচে মুস্তাফিজের পারফরম্যান্স হলো অভিজ্ঞতার খেলা।’
দিল্লির হয়ে গতবার দুঃস্বপ্নের আইপিএল শেষে জাতীয় দলের হয়েও সম্প্রতি সময়টা ভালো যাচ্ছিল না মুস্তাফিজের। একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন একাদিক ম্যাচে। ডিসেম্বরের নিলামে এমন একজনকে নিয়ে যখন কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি আগ্রহ দেখায়নি তখন তাকে ভিত্তি মূল্য ২ কোটি রুপিতে কিনে নেয় চেন্নাই। আর এবার অধিনায়ক না হলেও ধোনিই যে ফ্র্যাঞ্চাইটির ভেতর-বাইরের মূল পরিকল্পনাকারী, সেটি বোধহয় নতুন করে বলার কিছু নেই।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা, ফিজের কার্যকরিতা বোঝাতে এই তথ্য যথেষ্ট নয়। একে একে তিনি সাজঘরে ফিরিয়েছেন প্রতিপক্ষের দুই সুপারস্টার ফ্যাফ ডুপ্লেসিস, বিরাট কোহলি, রজত পাতিদার এবং অসি-অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিনকে। প্রথম ২ ওভার শেষে তার বোলিং ফিগার ছিল ৭ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট! একের পর এক কাটার, স্লোয়ারে, অ্যাঙ্গেল ডেলিভারি আর বাউন্সারে বিশ্বসেরা উইলোবাজদের একেবারে নাকাল করে ছেড়েছেন টাইগার পেসার। যেন সেই পুরনো ফিজ।
আর গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে প্রথম ২ ওভারে ২৩ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকা মুস্তাফিজ ৪ ওভার শেষে ৩০ রানে নেন ২ উইকেট। দুই ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে তিনিই এখন পর্যন্ত চলতি আইপিএলে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক।
পূর্ববর্তী পোস্ট