দুবাইয়ে টস জেতা মানেই নাকি ম্যাচ জেতা। বাবর আজমের টস জয়ের পর নাসিম-রউফের দুরন্ত গতি ও টার্নের মতো সুইং দেখে মনে হয়েছিল, এই রীতিই বুঝি বজায় থাকতে যাচ্ছে। কিন্তু সেই মিথ ভেঙে দিয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা জিতে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। একের পর এক উইকেট পড়লেও ঘাবড়ে যায়নি লঙ্কানরা। বরং ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে ভয়কে জয় করেছে তারা। আর এর অগ্রভাগে ছিলেন ভানুকা রাজাপাকসে। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে দুরন্ত এক ইনিংস খেলেন তিনি। পাকিস্তানকে হারিয়ে শ্রীলঙ্কা কেবল এশিয়া কাপের ষষ্ঠ শিরোপাই জেতেনি; তাদের ক্রিকেটের পুনর্জন্মও হয়েছে।
গত দুই-তিন বছর ধরেই ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট। এর মধ্যে কিছুদিন ধরে যোগ হয়েছে দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। তাদের অবস্থা এতটাই খারাপ, দেশের মাটিতে এশিয়া কাপ আয়োজনের সাহস পর্যন্ত দেখায়নি। তাই তো মাত্র দেড় মাস আগে সরিয়ে টুর্নামেন্ট আরব আমিরাতে নিয়ে আসা হয়। সেই শ্রীলঙ্কা শিরোপা জিতে সবাইকে চমকে দিয়েছে। এশিয়া কাপের শুরুটা দেখলেও তাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা কেউ চিন্তা করেছিলেন কিনা সন্দেহ।
কারণ, ১০৫ রানে আফগানিস্তানের কাছে অলআউট হওয়া দলটিকে নিয়ে কে বাজি ধরবে? কিন্তু তারাই বাজিমাত করল। তবে প্রথম ম্যাচে হারলেও যোগ্য দল হিসেবেই শিরোপা জিতেছে তারা। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশকে হারিয়ে তাদের ঘুরে দাঁড়ানো শুরু। এরপর আর পেছন ফিরে তাকায়নি তারা। সুপার ফোরে ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয়। আর ফাইনালে টস হারার পরও ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে শিরোপা জিতে নিয়েছে তারা। এজন্যই শ্রীলঙ্কার এই উত্থানকে নবজাগরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
টসে হারার পর তাদের মনের অবস্থা কী হয়েছিল সেটাও বর্ণনা করেছেন তিনি, ‘আমরা শুরুতে বোলিং করতে চেয়েছিলাম। টস হারার পর কোচ বললেন, চিন্তা করো না। টসে যা হওয়ার হয়ে গেছে, আমরা অবশ্যই শিরোপা জিততে পারব। তোমরা মনে সাহস রেখে স্বাভাবিক খেলাটা খেল। আমরা তখন লড়াইয়ের প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। নিজেদের সামর্থ্য দেখানোর জন্য উজাড় করে দেওয়ার জন্য মাঠে নেমেছিলাম। টসে হেরেও আমাদের জেতার পেছনে মূল কারণ এই মানসিকতা।’
এই ভয়ডরহীন মানসিকতা প্রথম ফুটে ওঠে ভানুকা রাজাপাকসের ব্যাটে। ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে ৪৫ বলে ৭১ রান করা এ ব্যাটার জানান, কাজটা নাকি সহজ ছিল না, ‘চাপের মুখে তখন ব্যাটিং করাটা মোটেও সহজ ছিল না। তারা দারুণ বোলিং করছিল। তবে তখন আমি ও হাসারাঙ্গা ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনায় অটুট থাকি। এ বিষয়টাই আমাদের রান করতে সহায়তা করেছে।’