রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রায় আট মাস হতে চলেছে। গেল কয়েক সপ্তাহে এ যুদ্ধের বাঁকবদল হয়েছে ক্ষণে ক্ষণে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, এখন যে পরিস্থিতি, তাতে মনে হচ্ছে যুদ্ধে এখন একটা ভারসাম্য এসেছে। মানে রাশিয়া ও ইউক্রেন সমানে সমান লড়ছে। ইউক্রেন পাল্টা আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে, যা তাদের যুদ্ধে অগ্রসর হতে সাহায্য করছে। তবে বিবিসি এও বলছে যে রাশিয়ার সেনাবাহিনী এখনো বেশ কিছু এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ চলাকালীন ইন্টারনেটে একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছে ইউক্রেন। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে ইউক্রেন। কিয়েভের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি গ্রুপের ব্যবস্থাপক উদ্যোক্তা ওলেনা বলেন, এটি ‘মিম’-এর জাতি। ‘মিমের যুদ্ধ হলে আমরাই জিততাম।’
ওলেনা তাঁর আসল নাম নয়। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে তিনি এবং তাঁর দল কাজ করে থাকেন। সংবেদনশীলতার কারণে তাঁকে ছদ্মনাম ব্যবহার করতে বলা হয়।
দিনের ২৪ ঘণ্টাই তাঁরা কাজ করেন। সারাদেশ থেকে পাওয়া খবরে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ‘পাঞ্চি’ ভিডিও তৈরি করে থাকেন তাঁরা। দর্শকদের এসব ভিডিওতে তাঁরা প্রায়ই মিউজিক সংযুক্ত করে থাকেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যেমন দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং সংবেদনশীলতা নিয়ে বক্তব্য রাখেন, তেমনি ওলেনার পাঁচটি শক্তিশালী দল তাঁর বার্তাগুলোকে লক্ষ্য করে ভিডিও তৈরি করেন।
গত জুনে সামরিক সহায়তার জন্য ব্রিটেনকে ধন্যবাদ জানানোর একটি ভিডিওতে গুস্তাভ হোলস্ট এবং দ্য ক্ল্যাশের গান, শেক্সপিয়ার, ডেভিড বোভি, লুইস হ্যামিল্টনের ঝলক এবং ব্রিটিশ সরবরাহকৃত ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের একটি ফুটেজ দেখানো হয়েছিল।
অতি সম্প্রতি ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর অস্ত্র সহায়তার সিদ্ধান্তকে একটি একটি ভিডিওর মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়েছিল। ভিডিওর অনেক জায়গায় ‘রোমান্টিক অঙ্গভঙ্গি দেখানো হয়’।
ওলেনা বলেন, তাঁর প্রিয় ‘ধন্যবাদ’ দেওয়া ভিডিওগুলোর মধ্যে একটি ইউক্রেনে সুইডেনের সামরিক সহায়তার প্রশংসা করে দেওয়া ভিডিও।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের টুইটার ফলোয়ার এখন দেড় মিলিয়ন। কিছু ভিডিও এক মিলিয়নেরও বেশি বার দেখা হয়েছে।
রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রিমিয়ায় রাশিয়ান লক্ষ্যবস্তুতে বেশ কয়েকটি রহস্যজনক হামলার পর আগস্টে প্রকাশিত ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ২ দশমিক ২ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। ওই ভিডিওতে ছুটি কাটাতে যাওয়ার জন্য রাশিয়ানদের উপহাস করা হয়েছিল।
ওলেনা বলেন, ‘মূল কথা হলো আন্তর্জাতিক দর্শকদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করা এবং দেখানো যে ইউক্রেন আসলে জয়ী হতে সক্ষম। কারণ, কেউই পরিজিতদের ওপর বিনিয়োগ করে না।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলোতে পোস্ট করা রাশিয়ান সামরিক বিপর্যয়ের ভিডিওর জন্য তাঁদের কাছে উপাদানের অভাব নেই। তাঁরা ট্রায়াল এবং নানা রকমের ত্রুটির মাধ্যমে শিখেছে কোনটা কাজ করে আর কোনটা নয়।
ওলেনা বলেন, ‘আমরা রুশ সেনাদের মৃতদেহ দেখানো শুরু করি। পরে আমরা বুঝতে পেরেছি যে এটি আসলে কাজ করেনি। এটা শুধু রুশদের আমাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করেছে।’
দলটি তখন ইউক্রেনীয় বেসামরিক নাগরিকদের লাশের ছবি দেখিয়ে রাশিয়ান সৈন্যদের বিবেকের কাছে আবেদন জানানোর চেষ্টা করে। তাঁদের ভিডিও প্রকাশের এই পন্থাটিও কাজে আসেনি।
ওলেনা বলেন, ‘ইউক্রেনের মানুষের লাশের ছবি দেখানোর পর আমরা বুঝতে পারি তারা এ নিয়ে গর্ববোধ করা শুরু করেছে। তাঁরা মোটেও এর নিন্দা করছিল না। আমরা বুঝতে পেরেছি যে আমাদের এটি আরও পরিশীলিত উপায়ে করতে হবে।’